কুর’আনে প্রযুক্তি ( প্রচন্ড ধাবমান সূর্যর ভেতরে কি হচ্ছে?)
মানুষ পবিত্র কুরআনকে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এসে পর্যালোচনার মাধ্যমে এর যথার্থ সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ তার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে প্রথমে ধারণা করে ছিল ‘‘সূর্য ঘুরছে, পৃথিবী স্থির। আবার পরবর্তীতে ধারণা করেছে যে সূর্য স্থির, পৃথিবী তার চতুর্দিকে ঘুরছে আর তাই দিন ও রাতের সৃষ্টি হচ্ছে। আসলে উক্ত দু‘টি মতবাদের কোনটাই সঠিক ছিল না বরং সূর্য ও পৃথিবী সহ মহাশুন্যে যা কিছু আছে সবই মহান শ্রষ্টার বেঁধে দেয়া নিয়মে সুনির্দিষ্ট পথে চলছে। সূর্যের ব্যাপারে কুরআন বলেছেঃ
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ (سورة يس ৩৮)
সূর্য তার নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গমন করছে। এটা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানীর সুনির্ধারিত ব্যবস্থা। (সূরা ইয়াছীন 36:৩৮) (অনুবাদ:-মাওলানা সালাহউদ্দীন ইউসুফ, পাকিস্তান)।
নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের আবর্তন, যেমনটি উপরের আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে- বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আমাদের ছায়াপথ একটি থালার আকৃতিতে বহু সংখ্যক নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। এই ছায়াপথে সেই থালার কেন্দ্র থেকে দূরে সূর্য একটি অবস্থান দখল করে আছে।(বামে প্রদর্শিত Astro-Image- এ সে সূযের অতি ক্ষুদ্র অবস্থান দেখানো হয়েছে।) ছায়াপথটি তার আপন অক্ষরেখার ওপর পরিভ্রমণ করে, যা তার কেন্দ্র। ফলে তা সূর্যকে একই কেন্দ্রের চারপাশে একটি বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তিত করে। ছায়াপথটি তার আপন অক্ষরেখায় তার আবর্তন শেষ করতে সময় নেয় ২৫০ মিলিয়ন বছর।
সূয, এই আবর্তন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে প্রর্তি সেকেন্ডে মোটামুটিভাবে ১৫০ মাইল বেগে পরিভ্রমণ করে। এটি সূর্যের নির্দিষ্ট গতিপথ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে- এতে কোনো সন্দেহ নেই যেমনটি কুরআন মাজিদের উপরের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞান বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, সূর্য তার কক্ষ পথে সেকেন্ডে ২৫০ কিঃ মিঃ বেগে পথ চলে। Encyclopedia Britannica, General Astor-Science বলা হয়েছে-
”সূর্য হচ্ছে এ বিশাল সৃষ্টিজগতের একটি সাধারণ নক্ষত্র, তবু প্রখরতা ও উষ্ণতাকে কোনো দিনই কোনো মানবীয় জ্ঞান পরিমাপ করতে পারেনি। প্রতি সেকেন্ডে ৪০ লক্ষ টন হাউড্রোজেন এর থেকে ছিটকে পড়ছে এমন সব তারকালোকে, যার তাপমাত্রা ৫০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর বুকে মানব সভ্যতার বিকাশের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত মানবকুল যত এনার্জি ব্যয় করছে তার চেয়ে দশগুণ বেশী এনার্জি প্রতি সেকেন্ডে সূর্য তার চারদিকে বিতরণ করে যাচ্ছে। যে গতিতে সূর্য তার হাউড্রোজেন ছড়াচ্ছে, তা একটি হাউড্রোজেন বোমার তুলনায় ১০ কোটি গুণ বেশী ক্ষমতা ও গতিসম্পন্ন। প্রতি সেকেন্ডে সূর্য তার আশে পাশে যে হিলিয়াম নামক তরল গ্যাস তৈরী করছে, তার পরিমাণ হচ্ছে ৫৬০৪ কোটি টন। এর শক্তি ও প্রখরতা এত বেশী যে, যদি সূচাগ্রও এই ভূমন্ডলের কোথাও গিয়ে পড়ে তাহলে তার ১০০ মাইলের ভেতরে কোন জীব-জন্তু থাকলে তা জ্বলে ছাই-ভম্ম হয়ে যাবে।”
আল্লাহপাক জাহান্নামকে আরও ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত করে সৃষ্টি করেছেন, সূর্যের ভেতরে ঘন ঘন সংঘঠিত বিশাল বিস্ফোরনের শক্তি উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে , একটি আরেকটিকে গ্রাস করছে, প্রচন্ড আক্রোশে লেলিহান rediation যা সায়েন্সের ভাষায় Solar Flare নামে পরিচিত ।জাহান্নামের শাস্তি মধ্যে অন্যতম প্রধান ভয়ঙ্কর শাস্তি হল তেজস্বী অগ্নি। আল্লাহপাক বলেনঃ-
067.006 وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
067.007 إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ
067.008 تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ
067.009 قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلا فِي ضَلالٍ كَبِيرٍ
067.010 وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ
067.011 فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لأصْحَابِ السَّعِيرِ

(6) যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।
( 7 ) যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে।
( 8 ) ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি?
( 9 ) তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ।
( 10 ) তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।
( 11 ) অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক।
( 12 ) নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (অনুবাদ:- মাওলানা মুহিউদ্দীন, উম্মুল কোরা, সৌদি আরব)
Al-Qur’an, 067.006-011 (Al-Mulk [The Sovereignty, Control, Dominion])

এই জ্বলন্ত সূর্যের সম্মুখ ভাগ থেকে প্রতি সেকেন্ডে আরেকটি জ্বালানী গ্যাস নির্গত হয়। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিছেন স্পইকুলস। এই গ্যাসের গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মাইল। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এক অদ্ভুত বিকর্ষণশক্তি তাকে মূহুর্তেই আবার সূর্যের কোলেই ছুড়ে মারে। এই যে অকল্পনীয় ও অস্বাভাবিক জ্বলন্ত আগুনের কুন্ডলি বানিয়ে রাখা হয়েছে, যার একটি অণু-পরমাণুও যদি ভূলোকে সরাসরি ধাক্কা লাগে, তাহলে গোটা পৃথিবীটাই জ্বলে পুড়ে ছাই-ভস্ম হয়ে যাবে বলে আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন। কিন্তু পৃথিবীর বুকে আলো বিতরণ করে একে ফুলে ফলে সাজিয়ে দেয়ার এ আয়োজনটকু করেছেন কে? কে এ মহান শক্তিধরকে ধ্বংস করার বদলে গড়ার কাজে লাগিয়ে রেখেছেন? এটি সুনিশ্চিত যে, না মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর, আর না যারা তার চারপাশে ছিলেন তাদের কাছে সূর্যের পরিভ্রমণের এই সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হল, এই তথ্যটি কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে মানুষ তা আবিষ্কার করারও বহু পূর্বে। যা এ কথার অন্য একটি সাক্ষ্য যে, সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলাই এই জ্ঞানের উৎস।

আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্য।


0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top